মুসলিম সমাজের নবজাগরণে আলীগড় আন্দোলনের ভূমিকা লেখো।

Published On:

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

মুসলিম সমাজের নবজাগরণে আলীগড় আন্দোলনের ভূমিকা লেখো

 Ans:-  ঊনবিংশ শতাব্দীতে মুসলিম সমাজের সংস্কার ও অগ্রগতির জন্য যিনি এগিয়ে এসেছিলেন তিনি হলেন স্যার সৈয়দ আহমেদ খান। তিনি আলীগড় আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা। তার সম্পর্কে ঐতিহাসিক ডক্টর রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেছিলেন- অর্থাৎ রাজা রামমোহন রায় হিন্দুদের জন্য যা যা করেছিলেন, সৈয়দ আহমেদ খানও তার মুসলিম গোষ্ঠীর জন্য সেই ধরনের কিছু কাজ করেছিলেন।

কৃতিত্ব:- সৈয়দ আহমেদ খান এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন একজন সরকারি কর্মচারী। কিন্তু পরবর্তীতে সমাজ সংস্কারের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। তার উল্লেখযোগ্য সংস্কারমূলক কাজগুলি হল:-

হিন্দু মুসলিম ঐক্য:-প্রথম জীবনে আহমেদ খান হিন্দু-মুসলিম ঐক্য গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি আশঙ্কা করেন হিন্দু-মুসলিম ঐক্য স্থাপিত হলে মুসলিমরা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকের পরিণত হবে। তাই তিনি অনগ্রসর মুসলিমদের স্বার্থ নিয়ে কাজ করেন।

সংস্কার দূরীকরণ:-আহমেদ খান মুসলিমদের কুসংস্কার ও রক্ষণশীলতা দূর করে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণের কথা বলেন। তিনি যুক্তি দিয়ে দেখান যে, পবিত্র কোরানে ইংরেজি ও বিজ্ঞান শিক্ষার বিরুদ্ধে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই।

আরো পড়ুন

দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের সমস্ত অধ্যায় থেকে  বড়ো প্রশ্ন উত্তর পেতে ক্লিক করুন

শিক্ষার প্রসার:-মুসলিম সমাজের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের জন্য তিনি গাজীপুরে একটি ইংরেজী বিদ্যালয়, ১৮৬২ সালে অনুবাদ সমিত, বিজ্ঞান সমিত, ১৮৭৫ সালে আলীগড় কলেজ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠা করেন।

নারী মুক্তি:- আহমেদ খান শিক্ষার প্রসারের পাশাপাশি নারীমুক্তের প্রচেষ্টা করেছিলেন। নারীদের বিভিন্ন অসম্মানজনক প্রথা, যেমন পর্দা প্রথা, বহুবিবাহ, তালাকপ্রথা প্রভৃতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন।

আলীগড় আন্দোলন:- উনবিংশ শতকে মুসলিম সমাজকে পাশ্চাত্য শিক্ষার আলোকে আলোকিত করে ব্রিটিশ শাসনের সঙ্গে নিজেদের সামঞ্জস্য বিধানের জন্য তিনি আলীগড় আন্দোলন গড়ে তোলেন। এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন খুদা বক্স, থিয়েডর ব্যাক, আলতাফ হোসেন আলী, চিরাগ আলী প্রমুখেরা।

থিয়োডর বেকের ভূমিকা:-স্যার সৈয়দ আহমেদ খানের প্রধান সহযোগী ছিলেন থিয়েডর ব্যাক। ইনস্টিটিউট গেজেটএর পত্রিকা প্রকাশ করে হিন্দুদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক প্রচার চালান। তার মূল লক্ষ্য ছিল হিন্দুদের বিরোধিতা করে ইংরেজদের বন্ধুত্ব লাভ করা।

আন্দোলনের দৃষ্টিভঙ্গি:- শেষ জীবনে আহম্মেদ খান প্রবল হিন্দু বিরোধী হয়ে ওঠেন। তাই কংগ্রেস দলকে তিনি হিন্দু সংগঠন বলেছিলেন। এর কারণ ছিল থিয়েডর ব্যাক। তিনিই তাকে বুঝিয়েছিলেন সংরক্ষণ ছাড়া মুসলিমদের উন্নতি হবে না।

আন্দোলনের প্রভাব:- আলিগড় আন্দোলন সমাজ সংস্কারে উদ্দেশ্যে গড়ে উঠলেও পরবর্তীতে তা ধর্মীয় আন্দোলনে পরিণত হয়। এই আন্দোলনের প্রভাব গ্রামাঞ্চলে পৌঁছায়নি। কেবলমাত্র শহরের শিক্ষিত মানুষদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তা সত্ত্বেও মুসলিম মানসিকতা অনেকাংশে পরিবর্তন ঘটিয়েছিল এই আন্দোলন।

 মূল্যয়নএত সমালোচনা সত্বেও বলা যায় যে সৈয়দ আহমেদ খান ও তার আলীগড় আন্দোলন অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য। কারণ উনবিংশ শতকে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন হিন্দুদের কাছে যা ছিল,  আলীগড় আন্দোলনও মুসলিমদের কাছে ঠিক তাই ছিল।

আরো পড়ুন

দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের সমস্ত অধ্যায় থেকে  বড়ো প্রশ্ন উত্তর পেতে ক্লিক করুন


সবার আগে সমস্ত পরীক্ষার গুরুত্বপূর্ণ নোটস এবং মকটেস্ট পেতে জয়েন করুন -

আরও গুরুত্বপূর্ণ

× close ad