ক্যান্টন বাণিজ্যের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল ? এই বাণিজ্যের অবসান কেনো হয় ?

Published On:

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

ক্যান্টন বাণিজ্যের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল ? এই বাণিজ্যের অবসান কেনো হয় ?

সূচনা : এশিয়া মহাদেশে আয়তনে এবং জনসংখ্যায় বৃহত্তম একটি রাষ্ট্র চিন যেখানে বাণিজ্যের অন্যতম দিক ছিল ক্যান্টন বাণিজ্য । চিনে বিদেশি বণিকের জন্য উন্মুক্ত একমাত্র বন্দর ক্যান্টনকে কেন্দ্র করে এক পৃথক বাণিজ্যপ্রথা গড়ে উঠেছিল যা ক্যান্টন বাণিজ্য নামে পরিচিত ।

বৈশিষ্ট্য : ক্যান্টন বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্যগুলি ছিল এইরকম

রুদ্ধদ্বার নীতি : রুদ্ধদ্বার নীতি অনুযায়ী বিদেশি বণিকরা চিনা ভাষা ও আদবকায়দা শিখতে পারত না । চিনের ফৌজদারি আইন ও বাণিজ্যিক নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য ছিল বিদেশি বণিকরা । এছাড়া কুঠিতে যে কোনো মহিলা ও আগ্নেয়াস্ত্রের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল ।

মূল শহরে প্রবেশ নিষিদ্ধ : শহরের মূল প্রবেশদ্বারের বাইরে একটি নির্দিষ্ট স্থানে বণিকরা বসবাস করত । তারা শহরে প্রবেশ করতে পারত না । ক্যান্টন বন্দরে বিদেশি বণিকরা স্ত্রী ও সন্তানদের রাখতে পারত না ।

কোহং প্রথা : বিদেশি বণিকরা ক্যান্টন বন্দরে স্বাধীনভাবে বা সরাসরি বাণিজ্যে অংশ নিতে পারত না । চিনা সরকার ‘ কো – হং ‘ নামক বণিক সংঘকে ক্যান্টন বন্দরে একচেটিয়া বাণিজ্য করতে দিত । বিদেশি বণিকদেরও কো – হং বণিকদের থেকেই পণ্য কিনতে হতো ।

ব্যক্তিগত বাণিজ্য : চিনের ক্যান্টন বন্দরে ব্রিটিশ সহ ইউরোপীয়রা নানা ধরনের ব্যক্তিগত বাণিজ্যে জড়িত ছিল । এর জন্য চিন সরকারের সঙ্গে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়তে হতো না ।

আরো পড়ুন

দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের সমস্ত অধ্যায় থেকে  বড়ো প্রশ্ন উত্তর পেতে ক্লিক করুন

ইংরেজ বণিকদের প্রাধান্য : ক্যান্টন বন্দরে ব্রিটিশ বণিকদের প্রাধান্য ছিল । এর মধ্যে চা – এর বাণিজ্য ছিল উল্লেখযোগ্য । চিনের সঙ্গে ইংল্যান্ডের এই বাণিজ্যকে বলা হতো ‘ দেশীয় বাণিজ্য ‘ ।

ক্যান্টন বাণিজ্য অবসানের কারণ

বাণিজ্যিক কার্যকলাপ : ক্যান্টনে ইউরোপীয় দেশগুলির উপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য বিদেশি শক্তিসমূহ সচেষ্ট হয়েছিল । কিন্তু চিন বিদেশিদের প্রতি উদারতা প্রদর্শন তো দূরের কথা উপরন্তু সবরকম বাণিজ্য বন্ধ করে দেওয়ার কথা f জানিয়ে দেয় ।

আফিম যুদ্ধ : উনিশ শতকের প্রথম দিকে চোরাপথে ব্রিটিশ বণিকরা চিনে আফিম পাঠাতে থাকে । আফিম ব্যাবসাকে কেন্দ্র করে চিন ও ব্রিটেনের মধ্যে হয় প্রথম আফি যুদ্ধ । এই যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে ক্যান্টন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে ।

অন্যান্য বন্দরের উত্থান : ১৯৪২ – এর নানকিং চুক্তির মাধ্যমে সাংহাই , নানকিং বন্দরে বিদেশিদের প্রবেশ উন্মুক্ত হয় । ফলে বিদেশি বাণিজ্যে ক্যান্টন একাধিপত্য হারায় । ১৮৫৯ সালে ক্যান্টন বাণিজ্য শপিং দ্বীপে স্থানান্তরিত হয় । ১৮৬৬ – এর মধ্যে সব বিদেশি শক্তি ক্যান্টন থেকে ব্যাবসা সরিয়ে নেয় । ক্রমে ক্যান্টন বাণিজ্য প্রথার অবসান ঘটে ।

উপসংহার: ব্রিটিশ বণিকরা উনিশ শতকের প্রথম থেকেই ভারত থেকে চোরাপথে চিনে আফিম রপ্তানি করতে থাকে। ফলে ক্যান্টন বাণিজ্যের চরিত্র বদলাতে শুরু করে। আফিমের ব্যাবসাকে কেন্দ্র করে চিনের সঙ্গে ব্রিটেনের বিরােধের ফলে প্রথম আফিম যুদ্ধ বা প্রথম ইঙ্গ-চিন যুদ্ধ (1839-42 খ্রি.) সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে চিনের পরাজয়ের ফলে ক্যান্টন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। চিন ক্যান্টন-সহ বেশ কয়েকটি বন্দর বিদেশি বণিকদের জন্য খুলে দিতে বাধ্য হয়।

আরো পড়ুন

দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের সমস্ত অধ্যায় থেকে  বড়ো প্রশ্ন উত্তর পেতে ক্লিক করুন


সবার আগে সমস্ত পরীক্ষার গুরুত্বপূর্ণ নোটস এবং মকটেস্ট পেতে জয়েন করুন -

আরও গুরুত্বপূর্ণ

× close ad