মার্কেন্টাইলবাদ‘ / ‘মার্কেন্টাইল‘ মূলধন বলতে কী বােঝ? এই মতবাদের মূল বক্তব্য তুলে ধরাে। 8
সূচনা: মার্কেন্টাইল বিখ্যাত ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ অ্যাডম স্মিথ তার লেখা বিখ্যাত গ্রন্থ ওয়েল্থ্ অব নেশনস (Wealth of Nations)- এ মার্কেন্টাইলবাদ (Mercantilism) কথাটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন। মার্কেন্টাইলবাদীদের ধারণায় পৃথিবীতে সম্পদের পরিমাণ সীমিত। এই মতবাদের মূল কথা হল সংরক্ষণবাদী অর্থনীতি অনুযায়ী বলা হয় এই মতবাদ মেনে বিদেশি পণ্য আমদানি কমানাের জন্য আমদানি শুল্ক বাড়ানাে হত। এর বৈশিষ্ট্য গুলি নীচে আলোচনা করাহল-
1. অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ : এই মতবাদ জনপ্রিয় হওয়ার ফলে রাষ্ট্রের অর্থনীতি রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন হয়ে পড়ে। দেশের অর্থনৈতিক কার্যকলাপ গিল্ডের পরিবর্তে জাতীয় সরকারের হাতে চলে যায়। এইভাবে মার্কেন্টাইলবাদ অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদের রূপ নেয়।
2. কৃষি উৎপাদন ব্যাহত : মার্কেন্টাইল মতবাদ অনুসরণকারীদের মতে, দেশের বাইরে খাদ্যশস্য রপ্তানি করলে দেশে খাদ্যসংকটদেখা দেবে। এই কারণে রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হয়। ফলে কৃষরা ফসলের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হয়। কৃষকরাও পরিবারের প্রয়োজনের বেশি খাদ্যশস্য উৎপাদন করত না। এই পরিস্থিতে কৃষির উন্নতি ও উৎপাদন বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
3. আমদানি হ্রাস ও রপ্তানি বৃদ্ধি : এই মতবাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল সম্পদের সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার। সেই কারণে এই সময় আমদানি কমিয়ে রপ্তানি (খাদ্যশস্য ছাড়া) বাড়ানোর কথা বলা হয়।
4. সোনা ও রুপার গুরুত্ব : মার্কেন্টাইল নীতি অনুসারে সোনা ও রুপার ভান্ডার বাড়ানোর ওপর জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধি নির্ভরশীল। এই কারণে যেসকল দেশের এই ভান্ডার কম তাদের তা বাড়ানোর জন্য রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধি করতে হবে।
আরো পড়ুন
দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের সমস্ত অধ্যায় থেকে বড়ো প্রশ্ন উত্তর পেতে ক্লিক করুন
5. সামুদ্রিক বাণিজ্য বৃদ্ধি : মার্কেন্টাইল মত অনুসারে সোনা-রুপার ভান্ডার বাড়ানোর জন্য সামুদ্রিক বাণিজ্য বাড়ানো ও তার জন্য উপনিবেশ স্থাপনে উদ্যোগ নেওয়া দরকার।
6. অবাধ বাণিজ্যের বিরোধিতা : মার্কেন্টাইলবাদীর৷ অবাধ বাণিজ্যের বিরোধী ছিলেন। তারা মনে করতেন, জাতীয় অর্থনীতির অবনমন রোধ করতে সরকারি হস্তক্ষেপ খুবই জরুরি। এই উদ্দেশ্যে নিষেধাজ্ঞা জারি, আমদানি শুল্ক চাপানো, শিল্পোদ্যোগে ভর্তুকি ইত্যাদি জরুরি।
7. মার্কেন্টাইলবাদের প্রয়োগ : মার্কেন্টাইলবাদের উল্লেখযোগ্য প্রয়োগ দেখা যায় ইংল্যান্ডের ‘নেভিগেশন আইন’ ও ফ্রান্সের মন্ত্রী কোলবার্টের ‘সরকারি অর্থ নিয়ন্ত্রণ’ নীতির মধ্যে।
8. মুক্ত বাণিজ্য: মার্কেন্টাইল মতবাদের মূল বিষয় হলো মুক্ত বাণিজ্য অর্থাৎ ইংল্যান্ড যেমন নেভিগেশন অ্যাক্টের দ্বারা ব্রিটিশ ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে বন্দরগুলিকে সকলের জন্য বাণিজ্য ক্ষেত্রে উন্মুক্ত করে দিয়েছিল, এখানে সেই বিষয়কেই তুলে ধরা হয়েছে।
মূল্যায়ন: এভাবেই অষ্টাদশ শতকের শেষার্ধ থেকে উনিশ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত উপনিবেশ দখল ও সম্প্রসারণের পরিবর্তে সামরিক ও কূটনৈতিক পথে বাণিজ্যিক আধিপত্য স্থাপনের নীতি গৃহীত হয় এবং মুক্ত বাণিজ্যভিত্তিক সাম্রাজ্যবাদের সূচনা হয়।
আরো পড়ুন
দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের সমস্ত অধ্যায় থেকে বড়ো প্রশ্ন উত্তর পেতে ক্লিক করুন