জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন বলতে কী বোঝ? আন্দোলনে ভারতের ভূমিকা আলোচনা কর।

Published On:

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন বলতে কী বোঝ? আন্দোলনে ভারতের ভূমিকা আলোচনা কর

জোটনিরপেক্ষ নীতি: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী জোট ও সােভিয়েত নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী জোটের কোনাে একটি জোটে যােগ না দিয়ে নিরপেক্ষ থাকার নীতিই হল জোটনিরপেক্ষ বা নিজোর্ট নীতি। এই জোটনিরপেক্ষ দেশগুলি নিজেদের স্বার্থে যে আন্দোলন গড়ে তােলে তার নাম নির্জোট আন্দোলন। এই নীতির প্রবক্তা হলেন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এবং যুগােশ্লাভিয়ার প্রধানমন্ত্রী মার্শাল টিটো।

জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের কারণ বা উদ্দেশ্য

জাতীয় ঐতিহ্য রক্ষা: সুপ্রাচীন কাল থেকেই অহিংসা, শান্তি, সহমর্মিতা ও সহনশীলতার আদর্শে ভারত বিশ্বাসী। এই সুমহান আদর্শ ও জাতীয় ঐতিহ্য বহন করার উদ্যোগ থেকেই ভারত সরকার জোটনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণে অগ্রসর হয়।

রাজনৈতিক স্বতন্ত্রতা:  রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভারত পুঁজিবাদ বা সাম্যবাদকোনােটিকেই সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করেনি। কারণ ভারত গণতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু নিজেই ঔপনিবেশিকতাবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও ফ্যাসিবাদের বিরােধী ছিলেন।

আর্থসামাজিক উন্নতি: স্বাধীনতা লাভের ঠিক পরের মুহূর্ত থেকেই ভারত এক গভীরতর আর্থসামাজিক সংকটের মুখে পড়ে। দেশভাগ, উদ্বাস্তু সমস্যা, বেকারত্ব, খাদ্যাভাব, কালােবাজারি, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা—এসব সমস্যার ফলে ভারতীয় অর্থনীতি একেবারে ভেঙে পড়লে নেহরু স্বতন্ত্র আর্থিক পরিকল্পনা গ্রহণের দ্বারা আর্থসামাজিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে সচেষ্ট হন।

নিরপেক্ষতা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সাম্যবাদী ও ধনতন্ত্রবাদী— এই দুই পরস্পরবিরােধী শক্তিজোটে বিভক্ত বিশ্ব যখন ঠান্ডা লড়াইয়ে মত্ত, তখন ভারত কোনাে জোটেই অংশগ্রহণ না করে নিরপেক্ষনীতি গ্রহণ করে।

তৃতীয় শক্তিজোটের নেতৃত্ব: যে সমস্ত দেশ ঠান্ডা লড়াইয়ের বাইরে থাকতে চাইছিল, কী আয়তন, কী জনসংখ্যা উভয় ব্যাপারেই ভারতের কাছে তারা ছিল নিতান্তই নগণ্য। সুতরাং নিজের নেতৃত্বে বিশ্বে একটা জোটনিরপেক্ষ গােষ্ঠী বা তৃতীয় শক্তিজোট গড়ে তােলার লক্ষ্যেও ভারত জোটনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করে।

আরো পড়ুন

দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের সমস্ত অধ্যায় থেকে  বড়ো প্রশ্ন উত্তর পেতে ক্লিক করুন

জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে ভারতের ভূমিকা

1.কমনওয়েলথঃ নেহেরু ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সাথে সুসম্পর্ক রাখার অংশ হিসেবে ঘোষণা করেন যে, ১৯৫০ সালের জানুয়ারিতে ভারত প্রজাতন্ত্র হলে ব্রিটিশ কলোনী থেকে স্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশসমূহকে নিয়ে গঠিত কমনওয়েলথ এ যোগদান করবে।

.জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনঃ ১৯৬১ সালে বেলগ্রেডে প্রতিষ্ঠিত জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নেহেরু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। জওহর লাল নেহেরুর আর্ন্তজাতিক রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য হলো জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন। এ প্রেক্ষিতে টিটো, নাসের ও উ নু এর সাথে মিত্র গড়ে ওঠে, যার ফলাফল জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন।

পঞ্চশীল নীতি: ভারত বিশ্বের সকল রাষ্ট্র, বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশসমূহের সাথে শান্তিপূর্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৫৪ সালে ২৮ এপ্রিল চীনের সাথে পাঁচটি দিকনিদের্শক সংবলিত শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যা পঞ্চশীল নামে পরিচিত। পরবর্তীতে ১৯৫৫ সালের এপ্রিলে বার্মা, চীন, লাওস, নেপাল, ভিয়েতনাম, যুগোস্লাভিয়া ও কম্বোডিয়া এ নীতি গ্রহণ করে।

আরো পড়ুন

দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের সমস্ত অধ্যায় থেকে  বড়ো প্রশ্ন উত্তর পেতে ক্লিক করুন


সবার আগে সমস্ত পরীক্ষার গুরুত্বপূর্ণ নোটস এবং মকটেস্ট পেতে জয়েন করুন -

আরও গুরুত্বপূর্ণ

× close ad