‘ভারত ছাড়ো আন্দোলন সম্পর্কে কি জানো? এই আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা আলোচনা কর।
সূচনা: সর্ববৃহৎ জাতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ভারত ছাড়াে বা আগস্ট আন্দোলন। এই আন্দোলন নিঃসন্দেহে ভারতবাসীর স্বাধীনতা লাভকে ত্বরান্বিত করে।
১৯৪২–এর ‘ভারত ছাড়াে‘ আগস্ট আন্দোলন:-
পটভূমি: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিকায় ক্রিপস মিশনের আগমন ও প্রস্থান, ভারতবাসীর তীব্র স্বাধীনতা-আকাঙ্ক্ষা, মূল্যবৃদ্ধি, জাপানি আক্রমণের ভয়, ব্রিটিশ সেনাদের অত্যাচার সবকিছু মিলেমিশে এক ভবিষ্যৎ গণ আন্দোলনের পটভূমি রচনা করে।
‘ভারত ছাড়াে‘ আন্দোলনের সূচনা: বােম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত (১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৮ আগস্ট) নিখিল ভারত কংগ্রেস সমিতির বিপুল ভােটে গান্ধিজির ভারত ছাড়াে প্রস্তাব পাস হয়। ঘােষণা করা হয় ৯ আগস্ট থেকে ভারত ছাড়াে আন্দোলন শুরু হবে এবং ইংরেজ ভারত না ছাড়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে। গান্ধিজি জাতির উদ্দেশ্যে ঘােষণা করেন- “ভারত স্বাধীন করব, অথবা মৃত্যুবরণ করব—’Do or Die (করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে)।”
আরো পড়ুন
দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের সমস্ত অধ্যায় থেকে বড়ো প্রশ্ন উত্তর পেতে ক্লিক করুন
বিস্তার:- বাংলায় আগস্ট আন্দোলনের মূলকেন্দ্র ছিল কলকাতা, ঢাকা, মেদিনীপুর, হুগলি-সহ বিভিন্ন জায়গায়।
এছাড়া বিহারের মুঙ্গের, ভাগলপুর, মুজাফফরপুর, পূর্ণিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে, যুক্তপ্রদেশের বালিয়া, আজমগড়, সুলতানপুর, জৌনপুর, গােরক্ষপুর প্রভৃতি জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে।
নেতৃবৃন্দ: গান্ধিজির ডাকে ভারত ছাড়াে আন্দোলনে যাঁরা দক্ষতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে জয়প্রকাশ নারায়ণ, অরুণা আসফ আলি, সুচেতা কৃপালনি, রামমনােহর লােহিয়া, অচ্যুৎ পট্টবর্ধন, অজয় মুখার্জি, যােগেশ চ্যাটার্জি, সুশীল ধাড়া, সরযূ পান্ডে, নানা পাতিল এবং আসামের ১৩ বছরের স্কুলছাত্রী কনকলতা বড়ুয়া ও মেদিনীপুরের তমলুকের ৭৩ বছরের বৃদ্ধা মাতঙ্গিনী হাজরা ছিলেন উল্লেখযােগ্য।
ভারতছাড়ো আন্দোলনে নারীদের অবদান:-
মধ্যবিত্ত নারীর যোগদান : এই আন্দোলনে স্কুলকলেজের ছাত্রীরা যোগদান করেছিল। আবার শিক্ষিত মধ্যবিত্ত নারীরা প্রকাশ্য ও গোপন দু’ধরনের আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিল। যেমন—উষা মেহতা বোম্বাইয়ে গোপন রেডিয়ো কেন্দ্র গড়ে তুলে গান্ধির ‘করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে’ আদর্শ সহ জাতীয় আদর্শ প্রচার করতেন।
নারীদের সংগঠন : নারীদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে অরুণা আসফ আলি ও সুচেতা কৃপালিনীর ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অরুণা আসফ আলি গোপনে জাতীয় আন্দোলন গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ৯ আগস্ট তিনি বোম্বাই-এর আগস্ট ক্রান্তি ময়দানে তেরঙ্গা পতাকা উত্তোলন করেন।
মাতঙ্গিনী হাজরা : ভারতছাড়ো আন্দোলনে অসীম বীরত্ব ও সাহসিকতা প্রদর্শনের জন্য মেদিনীপুরের মাতঙ্গিনী হাজরা ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে আছেন। তিনি মেদিনীপুরের তমলুক থানা দখল অভিযানের জন্য গড়ে ওঠা একটি মিছিলের নেতৃত্ব দেন। তিনি পুলিশের গুলিতে জখন হন ও শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
ভগিনী সেনা : ভারতছাড়ো আন্দোলনকালেবাংলার মেদিনীপুরে ‘তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার’ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি গ্রামীণ মহিলারা ব্রিটিশ বিরোধী প্রতিরোধ বা সংগ্রাম চালানোর জন্য নারী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। এইরূপ সংগঠন ‘ভগিনী সেনা’ নামে পরিচিত। ভগিনী সেনার অনেক নারী জেলবন্দি হন ও ৮৪ জনেরও বেশি নারী ধর্ষিতা হন।
উপসংহার : এভাবে দেখা যায় যে, ভারত ছাড়ো আন্দোলনকালে বাংলা, বোম্বাই, আসাম, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট, কর্ণাটকের হাজার হাজার নারী অংশগ্রহণ করেছিল। এই সমস্ত নারীদের অধিকাংশই কংগ্রেস দলের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত ছিল। তুলনামূলকভাবে কংগ্রেস সোশ্যালিস্ট পার্টি এই সময় আন্দোলনের নেতৃত্বে এগিয়ে এসেছিল। তবে এই আন্দোলনে বামপন্থী মনোভাবাপন্ন ও কমিউনিস্ট দলের নারী সদস্যদের। যোগদান ছিল সীমিত।
আরো পড়ুন
দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের সমস্ত অধ্যায় থেকে বড়ো প্রশ্ন উত্তর পেতে ক্লিক করুন