শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান।

Published On:

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

শিক্ষা সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান

ভূমিকা আধুনিক বাংলা তথা ভারতবর্ষের ইতিহাসে যে সমস্ত মহাপুরুষের আবির্ভাব ঘটেছে তার ভিতরে অন্যতম ছিল রাজা রামমোহন রায়।আধুনিক যুগে প্রবেশ করেও ভারতীয় সমাজ ও সভ্যতা যখন- অশিক্ষা, অসামাজিকতা ও কুসংস্কারের অন্ধকারে ডুবে ছিল, ঠিক তখনই আবির্ভাব ঘটে ভারত পথিক রামমোহন রায়ের এবং তখন তিনি সমগ্র জাতিকে আলোর পথ দেখান। এই জন্য তাকে “ভারতীয় নবজাগরণের অগ্রদূত বলা হয়।

শিক্ষা সংস্কার

শিক্ষার লক্ষ্য:  রাজা রামমোহন রায় শিক্ষার মাধ্যমে পাশ্চাত্যের জ্ঞানবিজ্ঞানের প্রয়োজনীয় দিকগুলিকে গ্রহণ করার কথা বলেছেন। এর সাথেই তিনি ভারতীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতির উৎকৃষ্ট দিকগুলিকে সংরক্ষণ করে জনগণের নৈতিক মূল্যবোধের বিকাশ সাধনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছিলেন।রামমোহন রায় মনে করতেন শিক্ষার লক্ষ্য হবে ব্যক্তি ও সমাজকল্যাণ।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা: রামমােহন রায় ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের জন্য হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠাতে তিনি ছিলেন ডেভিড হেয়ারের সহযোগী।১৮২২ খ্রিস্টাব্দে তিনি নিজ ব্যয়ে অ্যাংলাে হিন্দু স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।

আরো পড়ুন

দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের সমস্ত অধ্যায় থেকে  বড়ো প্রশ্ন উত্তর পেতে ক্লিক করুন

স্ত্রীশিক্ষা বিস্তার: স্ত্রীশিক্ষা বিস্তারে রামমোহন রায় যথেষ্ট ভূমিকা পালন করেছিলেন । ১৮২২ খ্রিস্টাব্দে ‘সংক্ষিপ্ত মন্তব্য’ নামক বই – এ নারীদের প্রাচীন অধিকারের বর্তমান সংকোচনের ওপর তিনি আলোকপাত করেন। এতে তিনি ভারতের হিন্দু ধর্মশাস্ত্রের উদাহরণ দিয়ে বোঝান যে অতি প্রাচীনকালেও নারীশিক্ষার প্রচলিত ছিল এবং সমাজে তাঁরা বিশেষ মর্যাদা পেতেন।

 সংবাদপত্র প্রকাশ: সংবাদপত্র প্রকাশের মাধ্যমে জনশিক্ষা প্রসারে বিশেষ ভূমিকা করেছিলেন রামমোহন রায়। তিনি মনে করতেন শিক্ষাই মানুষকে প্রকৃত পথের সন্ধান দিতে পারে। তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত পত্রিকাগুলি হল- ‘ সম্বাদ কৌমুদী’, ‘মিরাত-উল-আকবর’, ‘The Brahmanical Magazine’, ইত্যাদি।

সমাজ সংস্কার

ধর্মীয় সংস্কার: রাজা রামমোহন রায় সমাজের ধর্মীয় দিকটি সংস্করনের জন্য একান্তই উদ্যোগী পরায়ন ছিল। তিনি জাতিভেদ প্রথা,সংকীর্ণতা, দুর্নীতি, কুসংস্কার রাজা রামমােহনকে ব্যথিত করেছিল। তার কাছে হিন্দু সমাজের প্রচলিত আচার অনুষ্ঠান সর্বস্ব পৌত্তলিকতা,পুরােহিততন্ত্র, কুসংস্কার লােকাচার রামমােহনের কাছে সব অর্থহীন ছিল।

সমাজে নারীর সমান অধিকার: সম্পত্তির অধিকারের ক্ষেত্রে তিনি নারীকেও সমান অধিকার দেবার পক্ষে আন্দোলন করেন। সর্বত্রই নারী পুরুষের সাম্য ও অধিকারের সমতার দ্বারা সামাজিক উন্নয়নের পথটিকে তিনি উপলব্ধি করেন ।

আত্মীয়সভা ব্রাহ্মসভা প্রতিষ্ঠা: মানুষের আত্মিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য ও নিজের ধর্মভাবনা সম্পর্কে আলােচনার উদ্দেশ্য ১৮১৫ সালে আত্মীয়সভা এবং ১৮২৮ সালে ব্রাহ্মসভা প্রতিষ্ঠা করেন। যেখানে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলে উপাসনায় যােগ দিতে পারতাে।

সতীদাহ প্রথা নিবারণ : আমাদের দেশে তখন ভয়ঙ্কর কুপ্রথা ‘সতীদাহ প্রথা’ প্রচলিত ছিল । রামমোহন রায় প্রথম উদ্যোগ নিয়ে উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক এর বদান্যতায় ১৮২৯ সালে সতীদাহ প্রথা নিবারণ আইন পাশ করান। রামমোহনের সহযোগিতায় ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করেছিলেন।

উপসংহারঃ সমাজ সংস্কারক হিসাবে রাজা রামমােহনের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও আধুনিক ভারতীয় সমাজ ও সভ্যতায় তার অবদান অনস্বীকার্য বলে মনে করা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে, রামমােহন রায় ভারতে আধুনিক যুগের সূচনা করেন। তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাজা রামমোহন রায় কে ‘ভারত পথিক’ এবং দিলীপ কুমার দে ‘বিশ্বপথিক’ বলে অভিহিত করেছেন।

আরো পড়ুন

দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের সমস্ত অধ্যায় থেকে  বড়ো প্রশ্ন উত্তর পেতে ক্লিক করুন


সবার আগে সমস্ত পরীক্ষার গুরুত্বপূর্ণ নোটস এবং মকটেস্ট পেতে জয়েন করুন -

আরও গুরুত্বপূর্ণ

× close ad