ঔপনিবেশিক ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন-লেনিনের তত্ত্ব । 4+4

Published On:

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসনলেনিনের তত্ত্ব 4+4

ভূমিকা:- আধুনিক বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির উপনিবেশ প্রসারের কৌশল নয়া উপনিবেশবাদ ও নয়া সাম্রাজ্যবাদ নামে পরিচিত। উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বিষয়কে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে জে. এ. হবসন এবং ভি. আই. লেনিন সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ সম্পর্কে তাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।

হবসনের মতবাদ বৈশিষ্ট্য :-

১৯০২ সালে প্রকাশিত তাঁর ‘সাম্রাজ্যবাদ একটি সমীক্ষা’ গ্রন্থে বলেছেন ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদ ছিল পশ্চিম ইউরোপের শিল্পোন্নত দেশগুলিতে বিকশিত অর্থনৈতিক অগ্রগতির স্বাভাবিক পরিণতি। তিনি তাঁর গ্রন্থে বিষয়টি

ব্যাখ্যা করেছেন এইভাবে :

1. উদ্বৃত্ত পুঁজির সৃষ্টি : হবসনের মতে, ধনতান্ত্রিক বা পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় পুঁজিপতি মালিকদের হাতে বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রচুর মূলধন সঞ্চিত হয়। এই পাহাড় প্রমাণ মূলধন সৃষ্টি হওয়ার প্রধান কারণ হল সমাজে ধনসম্পদ বন্টনে ব্যাপক বৈষম্য।

2. পুঁজিপতিদের চাপ : এই পাহাড় প্রমাণ ‘বাড়তি মূলধনের চাপ-ই সাম্রাজ্যবাদ বা উপনিবেশ দখলের মূল কারণ। পুঁজিপতি শ্রেণি তাদের উদ্বৃত্ত (বাড়তি) মূলধন উপনিবেশে বিনিয়োগ করে আরও মুনাফা অর্জনের পরিকল্পনা করে।

3. আরও মুনাফা অর্জনের চেষ্টা : হবসন মনে করেন, উপনিবেশ দখলের পর পুঁজিপতি শ্রেণি সস্তায় কাঁচামাল সংগ্রহ, উচ্চমূল্যে পণ্য বিক্রির বাজার দখল ও উদবৃত্ত মূলধন লগ্নির মাধ্যমে আরও বাড়তি মুনাফা অর্জনের চেষ্টা করে। ফলে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা আরও ফুলেফেঁপে ওঠে।

4. ঔপনিবেশিকতাবাদ অবসানের উপায় : হবসন মনে করেন, এই উপনিবেশ দখলের ঘটনা প্রতিহত করা যায়। তাঁর মতে, পুঁজিপতিদের বাড়তি মূলধন দরিদ্র মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ব্যয় করলে তারা উদবৃত্ত পণ্য সামগ্রী কিনে ব্যবহার করতে পারবে। ফলে এই উদ্বৃত্ত পণ্য বিক্রির জন্য উপনিবেশ দখলের প্রয়োজন হবে না।

আরো পড়ুন

দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের সমস্ত অধ্যায় থেকে  বড়ো প্রশ্ন উত্তর পেতে ক্লিক করুন

লেনিনের মতবাদ বৈশিষ্ট্য:-

রাশিয়ার বিখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা ভি. আই. লেনিন সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদের প্রসারের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন তার সাম্রাজ্যবাদঃ পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ স্তর নামক গ্রন্থে (১৯১৬ খ্রি.)। এ সম্পর্কে তার প্রতিপাদ্য বিষয়গুলি হল一

1. বিপুল পুঁজির উদ্ভব : শিল্পের অগ্রগতির ফলে ইউরোপের দেশগুলির মুষ্টিমেয় পুঁজিপতির হাতে বিপুল পুঁজি সঞ্চিত হয়। এই সঞ্চিত পুঁজি লাভজনকভাবে বিক্রি করার জন্য এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলি ইউরোপের পুঁজিপতিরা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে দখল করে এবং সেখানে পুঁজি লগ্নির উদ্যোগ নেয়।

2. বাজার দখল কাঁচামাল সংগ্রহ : লেনিনের মতে, পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের শিল্পমালিকরা বেশি লাভের আশায় দেশের চাহিদার চেয়ে বেশি পণ্য সামগ্রী উৎপাদন করে। এই উদ্বৃত্ত পণ্য বিক্রি ও শিল্পোৎপাদনের জন্য সস্তায় কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলি উপনিবেশ দখলের চেষ্টা চালায়।

3. পুঁজি বিনিয়োগ : তবে লেনিন উপনিবেশ প্রসারের ক্ষেত্রে শিল্পে পুঁজি বিনিয়গের চেয়ে উপনিবেশে মূলধন বিনিয়োগের বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই, লেনিনের মতে, ‘সাম্রাজ্যবাদ হল পুঁজিবাদের প্রত্যক্ষ সম্প্রসারিত রূপ।

4. উপনিবেশ দখলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা : বিভিন্ন পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলির উপনিবেশ দখলকে কেন্দ্র করে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। লেনিনের মতে, পুঁজিবাদী অর্থনীতি হল যুদ্ধের জন্মদাতা।’ আর প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ছিল পুঁজিবাদী শক্তিগুলি কতৃক উপনিবেশ দখলের লড়াই।

মূল্যায়ণ: উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন ও লেনিনের তত্ত্ব সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত নয়। বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই এই তত্ত্বের ভ্রান্তি ধরা পড়ে। তবে এই তত্ত্বের গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না। তাই ডেভিড থমসনকে সমর্থন করে বলা যায় যে, সাগরপারে নিরাপদ বিনিয়ােগের ক্ষেত্র সন্ধানের আগ্রহই ইউরােপীয় দেশগুলিকে উপনিবেশ দখলে বিশেষ উদ্যোগী করে তুলেছিল।

আরো পড়ুন

দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের সমস্ত অধ্যায় থেকে  বড়ো প্রশ্ন উত্তর পেতে ক্লিক করুন


সবার আগে সমস্ত পরীক্ষার গুরুত্বপূর্ণ নোটস এবং মকটেস্ট পেতে জয়েন করুন -

আরও গুরুত্বপূর্ণ

× close ad