অতীতকে স্মরণ করার ক্ষেত্রে কিংবদন্তি এবং স্মৃতিকথার ভূমিকা আলাচনা করা।।
কিংবদন্তি:- ল্যাটিন শব্দ ‘Legenda’ থেকে ইংরেজি ‘লেজেন্ড’ কথাটি এসেছে। যার অর্থ হল পড়া বিষয়বস্তু। ইংরাজিতে লেজেন্ড বলতে যা বােঝায় তার প্রতিশব্দ হিসেবে বাংলায় সর্বজনগ্রাহ্য কোন প্রতিশব্দ নেই। যে গল্পকথা, লেকো পরম্পরায় বহুশ্রুত হয়ে কোনাে দেশ বা জাতির সংস্কৃতি গৌরব কে প্রতিষ্ঠা করে, যার আংশিক ঐতিহাসিক ভিত্তি থাকে সেই কাহিনী কিংবদন্তি।
কিংবদন্তির গুরুত্ব:- মৌখিক ইতিহাসের উপাদান হিসেবে কিংবদন্তির গুরুত্ব গুলি নিয়ে আলােচনা করা হল –
(ক) ঐতিহাসিক তথ্যের সূত্র:- রূপকথার মতাে কিংবদন্তি পুরােপুরি কাল্পনিক নয়। কিংবদন্তির বাস্তবতা হয়েছে । প্রসঙ্গত বাংলার কিংবদন্তি চরিত্র রঘু ডাকাতের কালীপুজোর সূত্র ধরে একটি কালীমন্দির শনাক্ত করা হয়েছে।
আরো পড়ুন
দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের সমস্ত অধ্যায় থেকে বড়ো প্রশ্ন উত্তর পেতে ক্লিক করুন
(খ) আনন্দ দান:- কিংবদন্তীর ঘটনাগুলি অতীতকাল থেকে মানুষের মুখে মুখে প্রচারিত হয়ে লােকসমাজকে আনন্দ দিয়ে যাচ্ছে। কিংবদন্তিতে আনন্দদায়ক উপাদান আছে বলেই এগুলি বংশপরম্পরায় বর্তমানকালে এসে পৌঁছেছে। সেই কারনে কিংবদন্তীর মাধ্যমে বিভিন্ন ঐতিহাসিক সূত্র বর্তমানে আমরা জানতে পারি।
(গ) শিক্ষাদান:- বর্তমানকালের মানুষকে কিংবদন্তির ঘটনাগুলি অতীতের নৈতিকতা , বীরত্ব প্রভৃতি বিষয়ে তথ্য সরবরাহ করে। এগুলি থেকে বর্তমান কালের মানুষ নৈতিকতার শিক্ষা লাভ করতে পারে এবং জীবনে চলার পথে সাবধানতা অবলম্বন করতে পারে।
স্মৃতিকথা:- আত্মজীবনীমূলক গ্ৰন্থের প্রধান বিভাগ হলাে স্মৃতিকথা। অতীতের কোনাে ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে যুক্ত কোন ব্যক্তি পরবর্তীকালে তার স্মৃতিকথা থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন ঘটনার বিবরণ লিপিবদ্ধ করে প্রকাশ করতে পারে। এরূপ কাহিনী সাধারণভাবে স্মৃতিকথা নামে পরিচিত।
স্মৃতিকথার গুরুত্ব:- স্মৃতিকথামূলক বিবরণ গুলি যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে, এই গুরুত্ব গুলি হল-
(ক) গুনিজনের বিবরণ:- অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এগুলি গুনী ব্যক্তিরা রচনা করেন। ফলে তাতে অবান্তর , পক্ষপাতমূলক , অভিরঞ্জন ঘটনা অনেক কম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিকথায় ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে বাঙ্গালীদের অবদানের কথা জানা যায়।
(খ) প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ:- বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ঘটনার বিবরণ তাদের স্মৃতিকথাগুলিতে আলােচনা করেন। ফলে উক্ত বিবরণে ঐতিহাসিক তথ্যের সত্যতা অনেক বেশি থাকে।
(গ) ঐতিহাসিক রচনার ক্ষেত্রে গুরুত্ব:- বিভিন্ন স্মৃতিকথা বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার মূল্যবান উপাদান হিসেবে কাজ করতে পারে। 1971 খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বর্বর পাকিস্তান বাহিনী পূর্ববঙ্গের সাধারণ মানুষের উপর পাক সামরিক বাহিনীর নিশংস অত্যাচার ও হত্যালীলা চালিয়েছিল। তার গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক উপাদান হলাে স্মৃতিকথা গুলি।
(ঘ) নিজস্ব অনুভূতির প্রকাশ:- বক্তা বা লেখক তার স্মৃতি কথায় যে কাহিনী বা ঘটনার বিবরণ দেন তা ঘটনার সমসাময়িককালে তার মনে কিরূপ প্রভাব ফেলেছিল তিনি কি অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলেন সেই ঘটনার সমসাময়িক পরিস্থিতি কিভাবে পাল্টে যেতে দেখেছেন তা তার স্মৃতিকথা আলােচনায় উঠে আসে।
আরো পড়ুন
দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের সমস্ত অধ্যায় থেকে বড়ো প্রশ্ন উত্তর পেতে ক্লিক করুন