স্বাধীন ভারতের প্রথম তিনটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য ও গুরুত্ব আলোচনা কর।

Published On:

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

স্বাধীন ভারতের প্রথম তিনটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য গুরুত্ব আলোচনা কর

Ans:- 1947 খ্রিস্টাব্দের 15ই আগস্ট স্বাধীনতা লাভের পর ভারতবর্ষ প্রথম থেকেই নানান সমস্যায় জর্জরিত ছিল। দীর্ঘ 200 বছর ধরে ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসন ভারতবর্ষকে অর্থনৈতিক দিক থেকে প্রায় নিঃস্ব করে দিয়েছিল।প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর উদ্যোগে 1950 খ্রীঃ ভারতীয় পরিকল্পনা কমিশন গঠিত হয়।

) প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (1951 খ্রীঃ-1956 খ্রীঃ):- স্বাধীনতা লাভের পর ভারতবর্ষ যে বহুমুখী অর্থনৈতিক সমস্যা সম্মুখীন হয়েছিল তার দূর করার উদ্দেশ্যে 1951 খ্রিস্টাব্দে প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ স্যার রয় হ্যারড ও অধ্যাপক ইভসি ডোমারের রচিত মডেলকে অনুসরণ করে এই পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার খসড়া প্রস্তুত করা হয়।

উদ্দেশ্যে বা লক্ষ্য:- প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যগুলি ছিলো নিম্নরূপঃ- ১)দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও দেশ বিভাগের প্রভাবে ভারতের ভেঙে পড়া অর্থনৈতিক সংকট দূর করা। ২)কৃষির ওপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধির দ্বারা খাদ্য সংকট ও কাঁচামালের সংকট দূর করা।  ৩) মুদ্রাস্ফীতি সমস্যার সমাধান করা। ৪) উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।

গুরুত্ব প্রথম পঞ্চবার্ষিকী  পরিকল্পনা  লক্ষ্যগুলি মোটামুটি ভাবে সফল হয়েছিল। জাতীয় আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা যেখানে বার্ষিক 2% নির্ধারণ করা হয়েছিল, বাস্তবে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল 3.6%। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা যেখানে 0.9% নির্ধারণ করা হয়েছিল, বাস্তবে তা বেড়ে দাঁড়িয়ে ছিল 1.7%। এছাড়া কৃষির উৎপাদন 3.7% ও শিল্প উৎপাদন 7% হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল।

আরো পড়ুন

দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের সমস্ত অধ্যায় থেকে  বড়ো প্রশ্ন উত্তর পেতে ক্লিক করুন

2)দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (1956 খ্রীঃ-1961 খ্রীঃ):- প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সাফল্য লাভের পর জহরলাল নেহেরুর  আদর্শকে বাস্তবায়িত করার উদ্দেশ্যে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউশনের প্রখ্যাত পরিসংখ্যানবিদ প্রশান্তচন্দ্র মহানালবিশ 1955 খ্রীঃ দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মডেল বা রূপরেখা তৈরি করে। প্রধানমন্ত্রী নেহেরু কিছু সংশোধনের পর এই মডেলের প্রয়োগ ঘটনা, যা নেহেরু- মহানালবিশ মডেল নামে পরিচিত।

উদ্দেশ্যে বা লক্ষ্যদ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যগুলি ছিলো নিম্নরূপঃ ১)বুনিয়াদি ও ভারী শিল্প নির্মাণের উপর গুরুত্ব আরোপ করে দেশে দ্রুত শিল্পায়নের ব্যবস্থা করা। ২)বেকার সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে অন্তত 1 কোটি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। ৩)ভারী শিল্পের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের বিকাশ ঘটানো। ৫)দেশের অর্থনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন রোধ করার জন্য সরকারি হস্তক্ষেপ ও উপযুক্ত  করা।

গুরুত্বপ্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মত দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা সব ক্ষেত্রে সফল হয়নি। জাতীয় আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা যেখানে 5 বছরে 25% নির্ধারণ করা হয়েছিল, বাস্তবে তা দাঁড়ায় 20% এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা যেখানে বার্ষিক 3.3 নির্ধারণ করা হয়েছিল, বাস্তবে তা বেড়ে দাঁড়ায় 1.9%।

) তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা(1961খ্রীঃ-1966 খ্রীঃ):- দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বিভিন্ন ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হওয়ার পর ভারত সরকার 1961 খ্রিস্টাব্দের তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এই পরিকল্পনা মোটামুটিভাবে দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুকরণে তৈরি হলেও এক্ষেত্রে কৃষির উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছিল।

উদ্দেশ্যে বা লক্ষ্য তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যগুলি ছিলো নিম্নরূপঃ- ১)ভারতবাসীর জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের উদ্দেশ্যে বার্ষিক 5% হারে জাতীয় আয় বৃদ্ধি করা এবং বার্ষিক 3.2% হারে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করা। ২)প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য ও কাঁচামাল উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে তাতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা। ৩)শিল্প ক্ষেত্রে ও রপ্তানি ক্ষেত্রে চাহিদা মেটাতে বার্ষিক 6% হারে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা। ৪)লৌহ ইস্পাত, রাসায়নিক দ্রব্য, যন্ত্রপাতি, শক্তি ও জ্বালানির মত মৌলিক শিল্পের বৃদ্ধি ঘটানো।

গুরুত্ব ভারত-চীন  যুদ্ধ,  ভারত-পাকিস্তান  যুদ্ধ, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ইত্যাদি কারণে এই পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা শোচনীয় ভাবে ব্যর্থ হয়।এই পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় জাতীয় আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা যেখানে বার্ষিক 5% নির্ধারণ করা হয়েছিল, বাস্তবে তা দাঁড়ায় মাত্র 2.5% এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা যেখানে 3.2% নির্ধারণ করা হয়েছিল, বাস্তবে তা দাঁড়ায় মাত্র 0.2%।

উপসংহার :- পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গুলি রূপায়ণ করতে গিয়ে প্রথম থেকেই ভারতকে বিদেশী সহায়তার মুখাপেক্ষী থাকতে হয়েছে। প্রতিটি পরিকল্পনার সময় বিদেশ থেকে ঋণ গ্রহণের ফলে ভারত বিপুল ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েছে।

আরো পড়ুন

দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের সমস্ত অধ্যায় থেকে  বড়ো প্রশ্ন উত্তর পেতে ক্লিক করুন


সবার আগে সমস্ত পরীক্ষার গুরুত্বপূর্ণ নোটস এবং মকটেস্ট পেতে জয়েন করুন -

আরও গুরুত্বপূর্ণ

× close ad