চিনে ৪মে আন্দোলনের কারণ ও প্রভাব আলোচনা কর।

Published On:

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

চিনে ৪মে আন্দোলনের কারণ প্রভাব আলোচনা কর

সূচনা: বিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকে চিনে রাজতন্ত্রী ও প্রজাতন্ত্রী বিপ্লবীদের মধ্যে প্রবল সংগ্রাম শুরু হয়। এই পরিস্থিতিতে চিনে বিদেশিদের আধিপত্যের অবসানের লক্ষ্য সেদেশে প্রবল এক বৌদ্ধিক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ মে শুরু হওয়া এই আন্দোলন ৪ মে-র আন্দোলন (May Fourth Movement) নামে পরিচিত।

এই আন্দোলনের কারণ গুলি হল

ইউয়ানসিকাই এর নৃশংসতা : ১৯১১ সালে বিপ্লবের পর রাষ্ট্রপতি সান-ইয়াত-সেন দেশের গৃহযুদ্ধ এড়াতে ইউয়ান-সি-কাই -এর অনুকূলে স্বেচ্ছায় রাষ্ট্রপতি পদ ত্যাগ করেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর ইউয়ান-সি-কাই সমস্ত সাংবিধানিক পদ্ধতি বাতিল করে সামরিক একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। এর প্রতিবাদ করলে কুয়োমিনতাং দলের নেতা সুং-চিয়াও-জেন সহ অনেক বিরোধী নেতাকে হত্যা করেন। ফলে জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।

কুয়োমিনতাং দল নিষিদ্ধ : ইউয়ান-সি-কাই এর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সান-ইয়াৎ-সেন ১৯১৩ সালে পুনরায় বিপ্লবের ( দ্বিতীয় বিপ্লব ) ডাক দেন৷ ইউয়ান-সি-কাই কঠোর হাতে এই বিদ্রোহ দমন করেন এবং কুয়োমিনতাং দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। এতেও জনগণ ক্ষুব্ধ হন।

আরো পড়ুন

দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের সমস্ত অধ্যায় থেকে  বড়ো প্রশ্ন উত্তর পেতে ক্লিক করুন

জাপানের একুশ দফা দাবি : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান জার্মানির কাছ থেকে চিনের শান্টুং প্রদেশ দখল করে৷ এরপর ১৯১৫ সালে সমগ্র চিনের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে একুশ দফা দাবি পেশ করে। এই আধিপত্যবাদী দাবির বিরুদ্ধে জনগণ প্রতিবাদ জানায়।

জাপানি পণ্য বয়কটের ডাক : জাপানের এই আগ্রাসী মনোভাবের ( একুশ দফা দাবি ) বিরোধিতায় ১৯১৫ সালে চিনে ‘নাগরিকদের দেশপ্রেমী সমিতি’ ও ‘জাপ-বিরোধী কমরেডদের জাতীয় সমিতি গড়ে ওঠে। এই সমিতি জাপানি পণ্য বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয়। একুশ দফা দাবির বিরুদ্ধে আমেরিকার চিনা ছাত্ররাও বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।

 জাপানের সঙ্গে গোপন চুক্তি : সম্রাট পদের লোভে ইউয়ান-সি- কাই জাপানের সঙ্গে গোপন চুক্তি করে। জাপানের পরামর্শে তিনি বয়কট আন্দোলন প্রত্যাহারের নির্দেশ দিলে চিনে তীব্র জনরোষের সৃষ্টি হয়।

চিনা শিল্পের সংকট : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় চিনে বিদেশি পণ্যের আমদানি কমে যায়। এই সুযোগে চিনা শিল্প কিছুটা বিকাশ লাভ করে৷ কিন্তু যুদ্ধ শেষে বিদেশি পণ্য পুনরায় বাজার দখল করলে চিনা শিল্পগুলি অস্তিত্বের সংকটে পড়ে।

প্রত্যক্ষ কারণ : এর পর বিশ্বযুদ্ধ শেষে ১৯১৯ সালে প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে চিনের প্রতিনিধিরা ‘জাপানের একুশ দফা দাবি’ সহ সমস্ত অসমচুক্তি এবং শান্টুং প্রদেশে জাপানি কতৃত্ব বাতিলের দাবি জানায়৷ কিন্তু ইউরোপীয় কতৃপক্ষ চিনের দাবিগুলিকে ‘আলোচনা বহির্ভুত’ বিষয় বলে এড়িয়ে যায়।

আন্দোলনের প্রভাব ( গুরুত্ব ) : পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে চিনে যে সাংস্কৃতিক নবজাগরণের সূচনা হয়েছিল তারই জনশ্রুতি ছিল ৪ঠা মে-র আন্দোলন। এই আন্দোলন চিনের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিল।

1. দেশাত্মবোধ আধুনিকতার উদ্ভব : এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই চিনে আধুনিকতা, দেশপ্রেম, ও জাতীয়তাবোধের সূচনা হয়।

2. সরকারের নতি স্বীকার : ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের চাপে সরকার ধৃত ছাত্রদের ছেড়ে দিতে এবং ভার্সাই সন্ধিতে স্বাক্ষর না করার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়।

3. কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা : এই আন্দোলনের ফলেই চিনে কুয়োমিনতাং দলের পুনর্গঠন হয় এবং কমিউনিস্ট পার্টির উত্থান হয়। জঁ-শ্যেনো-র মতে চিনের শ্রমিক শ্রেণি রাজনৈতিক সংগ্রামের আঙিনায় প্রবেশ করে।

4. ব্যাপকতা : এই আন্দোলনের প্রভাব ছিল চিনের সর্বত্র ও গণভিত্তি ছিল ব্যাপক৷

5. সাংস্কৃতিক অগ্রগতি : মূলত এই সময় চিনের পুরানো কনফুসীয় মতাদর্শ সমালোচিত হয় এবং চিনারা নতুন সংস্কৃতিকে সবাই স্বাগত জানায়। ফলে ব্যাপক সাংস্কৃতিক অগ্রগতি ঘটে।

আরো পড়ুন

দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের সমস্ত অধ্যায় থেকে  বড়ো প্রশ্ন উত্তর পেতে ক্লিক করুন


সবার আগে সমস্ত পরীক্ষার গুরুত্বপূর্ণ নোটস এবং মকটেস্ট পেতে জয়েন করুন -

আরও গুরুত্বপূর্ণ

× close ad