ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে ভারতের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার বর্ণনা দাও।

Published On:

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে ভারতের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার বর্ণনা দাও

ভূমিকা :- 1765 সালে দেওয়ানি লাভের পর বাংলার গভর্নর লর্ড ক্লাইভ পূর্বতম মুঘল আমলে ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা বজায় রাখেন। পরবর্তীকালে ওয়ারেন হেস্টিংস বাংলার গভর্নর জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত হয়ে ভারতের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে বিভিন্ন পরীক্ষা চালিয়ে রাজস্ব আদায়ের ভার কোম্পানির হাতে তুলে দেয়। এই কোম্পানির আমলে ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার যে দিক আছে সেগুলি হল যথা

পাঁচশালা বন্দোবস্ত :-  গভর্নর-জেনারেল ওয়ারেন হস্টিংস রাজস্ব আদায়ের জন্য 1772 সালে একটি কমিটি গঠন করেন। যে ইজারাদার কোম্পানিকে সর্বোচ্চ পরিমাণ রাজস্ব দিতে রাজি হতো এই কমিটি তাকে পাঁচ বছরের জন্য জমি বন্দোবস্ত প্রদান করত। এমনকি পুরনো জমিদার সর্বোচ্চ পরিমাণ রাজস্ব দিতে অক্ষম হলে তিনি জমিদারি হারাতে। এই ব্যবস্থা ইজারাদার ব্যবস্থা বা পাঁচশালা বন্দোবস্ত নামে পরিচিত।

একসালা বন্দোবস্ত :-  ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার পাঁচশালা বন্দোবস্তে কিছু ত্রুটি লক্ষ্য করা যায় যা দূর করার উদ্দেশ্যে 1777 সালে হেস্টিংস পাঁচশালা বন্দোবস্ত বাতিল করে এক নতুন ভূমি বন্দোবস্ত প্রচলন করেন,যা একসালা বন্দোবস্ত নামে পরিচিত। এই বন্দোবস্ত অনুসারে —

 (i) প্রতি বছর পুরনো জমিদারদেরই জমি দেওয়া হবে।

 (ii) বিগত তিন বছরের রাজস্ব গড় অনুসারে এই বন্দোবস্তে রাজস্বের পরিমাণ নির্ধারিত হয়।

দশ সালা বন্দোবস্ত :-  জন শোরের বক্তব্যে আকৃষ্ট হয়ে কর্নওয়ালিস 1789 সালে বাংলা ও বিহারে এবং 1790 সালে উড়িষ্যায় 10 বছরের জন্য জমি দেওয়ার প্রথা চালু করেন যা দশ সালা বন্দোবস্ত নামে পরিচিত। এই ব্যবস্থা প্রবর্তন এর সাথে তিনি ঘোষণা করেন যে বৃটেনের পরিচালক সভায় অনুমোদন দিলে এই 10 বছর মেয়াদী বন্দোবস্তকে চিরস্থায়ী করা হবে।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত :-  1793 সালে বাংলা,বিহার ও উড়িষ্যা এবং পরবর্তীকালে বারানসি,উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ ও মাদ্রাসা প্রেসিডেন্সির কিছু অঞ্চলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করা হয়। এই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের শর্ত হলো —(i) সূর্যাস্ত আইন অনুসারে জমিদাররা সরকারের প্রাপ্য রাজস্ব নির্দিষ্ট দিনে সূর্যাস্তের মধ্যে পরিশোধ করতে বাধ্য ছিল।

আরো পড়ুন

দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের সমস্ত অধ্যায় থেকে  বড়ো প্রশ্ন উত্তর পেতে ক্লিক করুন

রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত :- উপনিবেশিক ভারতের কিছু অংশে রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত চালু হয়। আলেকজান্ডার রিড,টমাস মনরোর উদ্যোগে 1820 সালে মাদ্রাসা প্রেসিডেন্সির কিছু অঞ্চল বাদে ভারতের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত চালু হয়। এই ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য হলো

 (i) এই ব্যবস্থায় কোনো মধ্যবর্তী শ্রেণীর উপস্থিতি ছিল না,তাই রায়ত ও কৃষকদের থেকে সরকার সরাসরি ভূমি রাজস্ব আদায় করত।

মহলওয়ারি ব্যবস্থা :- ভারতের বৃহৎ অংশের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করা হলেও উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কোন ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা অনুসরণ করা উচিত এই নিয়ে কোম্পানির মধ্যে মত বিরোধ দেখা দেয়। এই ব্যবস্থা উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ ও মধ্য ভারতের কিছু অঞ্চলে চালু হয় এই ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য হলো –  (i) জমির উৎপাদন শক্তি অনুসারে রাজস্বের হার নির্ধারিত হত।

ভাইয়াচারি বন্দোবস্ত কোম্পানির নানা ধরনের রাজস্ব ব্যবস্থার মধ্যে অন্যতম একটি ছিল ভাইয়াচারী বন্দোবস্ত। ১৮৪৬ থেকে ১৮৪৯ সালের মধ্যে পাঞ্জাবের কিছু অঞ্চলে চালু করা হয় এই ভাইয়াচারী বন্দোবস্ত।

এ ছাড়াও কোম্পানি নানা ধরনের ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা প্রবর্তন করে যেমন, ভাইয়াচারি বন্দোবস্ত পাঞ্জাবের কিছু অঞ্চলে চালু করা হয়। পরীক্ষানিরীক্ষা করে, যাতে সর্বোচ্চ রাজস্ব, ভারতের বিপুল চাষি-জমি থেকে জোগাড় করা যায়, সেই লক্ষ্য পূরণে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি উদ্যত হয়। এর ফলে সাধারণ কৃষকের ওপর অতিরিক্ত রাজস্বের বােঝা এসে পড়ে।

আরো পড়ুন

দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের সমস্ত অধ্যায় থেকে  বড়ো প্রশ্ন উত্তর পেতে ক্লিক করুন


সবার আগে সমস্ত পরীক্ষার গুরুত্বপূর্ণ নোটস এবং মকটেস্ট পেতে জয়েন করুন -

আরও গুরুত্বপূর্ণ

× close ad