আধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতি কিরূপ হওয়া উচিত ? অথবা : একজন ঐতিহাসিক কে ইতিহাস রচনায় কোন কোন নীতি অনুসরণ করতে হয়? দুটি শিল্প জাদুঘরের নাম লেখ। দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের বড়ো প্রশ্ন উত্তর|

Published On:

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

আধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতি কিরূপ হওয়া উচিত ? অথবা : একজন ঐতিহাসিক কে ইতিহাস রচনায় কোন কোন নীতি অনুসরণ করতে হয়? দুটি শিল্প জাদুঘরের নাম লেখ

সূচনা : আধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতি একটি নির্দিষ্ট নিয়ম এর মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। ঐতিহাসিক লিওপোল্ড রেঙ্ককে বলেছেন  “যে ঘটনা যেভাবে ঘটেছে তা সঠিক বর্ণনার মাধ্যমে দেখানো হল ইতিহাস “। যথার্থ ইতিহাস রচনার করতে গেলে কোন একজন ঐতিহাসিক কে সুসংবদ্ধ পদ্ধতি যেসব নীতি অনুসরণ করতে হবে, সেগুলি হল –

[1] উৎসের অনুসন্ধান: ইতিহাস লিখনপদ্ধতির ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ হল ঐতিহাসিক ঘটনার উৎসের অনুসন্ধান করা। ইতিহাস হল উৎসভিত্তিক, উৎস ছাড়া ইতিহাস হয় না। উৎস আবার নানা ধরনের হয়ে থাকে। যথা—

প্রত্নতাত্ত্বিক: জীবাশ্ম, যন্ত্রপাতি,আসবাবপত্র, স্থাপত্য প্রভৃতি।

মৌখিক: পৌরাণিক কাহিনি, অতিকথন, রূপকথা, কিংবদন্তি, কাহিনিমালা, পালাগান, প্রবাদ প্রভৃতি।

ছবিভিত্তিক: চিত্রকলা, নকশা, মানচিত্র প্রভৃতি।

লিখিত বিবরণমূলক: প্রাচীন পাণ্ডুলিপি,চিঠিপত্র, সংবাদপত্র, মুদ্রিত পুস্তক প্রভৃতি।

আরো পড়ুন

দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের সমস্ত অধ্যায় থেকে  বড়ো প্রশ্ন উত্তর পেতে ক্লিক করুন

[2] উৎস থেকে তথ্য চয়ন: উৎসের অনুসন্ধান শেষে ঐতিহাসিক তার প্রয়ােজনীয় উৎসটি চিহ্নিত করেন। এই উৎস থেকে ঐতিহাসিক তার প্রয়ােজনীয় তথ্যাবলি সংগ্রহ করেন। কোনাে তথ্য অতি প্রয়ােজনীয়, কোনােটা আবার মােটামুটি প্রয়ােজনীয়, আবার কোনাে তথ্য ঐতিহাসিকের কাছে অপ্রয়ােজনীয় মনে হতে পারে। ঐতিহাসিককে এই প্রয়ােজনীয়তা অনুযায়ী উৎস থেকে তথ্য চয়ন করতে হবে।

[3] তথ্যের যাচাইকরণ: ঐতিহাসিক তথ্যগুলি গ্রহণ করার পর সমালােচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গিতে সেগুলির যাচাই করে থাকেন। এক্ষেত্রে ঐতিহাসিককে দুটি কাজ করতে হয়। প্রথমটি হল তথ্যের বাহ্যিক সমালােচনা, আর দ্বিতীয়টি হল তথ্যের অভ্যন্তরীণ সমালােচনা।

[4] তথ্যসমূহের বিশ্লেষণ: ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক ইতিহাসের তথ্যসূত্রগুলিকে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিশ্লেষণ করতে হয়। কোনাে বক্তব্য প্রামাণ্য তথ্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত হলে সেই তথ্যকে সত্য বলে গ্রহণ করা যায়। ঐতিহাসিকের গ্রহণ করা বেশ কিছু তথ্য ব্যক্তিনিরপেক্ষ, যেমন—পুরাতাত্ত্বিক তথ্য, মুদ্রা, প্রাচীন সাহিত্য, সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ ইত্যাদি।

[5] ঘটনা বক্তব্যের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন: দুটি ঘটনা বা বক্তব্যের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের প্রচেষ্টা আসলে ঐতিহাসিকের সত্য রক্ষার নীতি বলা চলে যা মূলত চারটি উপাদানের মিলিত রূপ যথা-করেসপন্ডেন্স থিয়ােরি, কোহেরেন্স থিয়ােরি, অথরিটি ও মেমােরি। করেসপন্ডেন্স থিয়ােরি দিয়ে সত্যের সঙ্গে তথ্যের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়। কোহেরেন্স থিয়ােরির দ্বারা ঐতিহাসিক ঘটনাবলির মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে ঐতিহাসিক সত্যে পৌঁছােনাের চেষ্টা করে থাকেন।

[6] ধারাবাহিকতা কালানুক্রম: ধারাবাহিক কালানুক্রম ইতিহাস রচনাপদ্ধতির এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। যে-কোনাে ঘটনা বর্ণনার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক সেই ঘটনার সময়কাল উল্লেখ করেন। কালক্রম অনুসারে ঐতিহাসিক ঘটনাগুলিকে তিনপর্বে ভাগ করে আলােচনা করেন, যথা— [i] ঘটনার সূচনাপর্ব বা প্রাথমিক অবস্থা; [ii] ঘটনার গতিপ্রকৃতি বা মধ্যাবস্থা; [iii] ঘটনার পরিণতি বা শেষ অবস্থা।

(7) কার্যকারণ পদ্ধতি: ঐতিহাসিক ই. এইচ. কার লিখেছেন, ইতিহাস চর্চার মূল কথা হল ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করা। প্রাচীনকালের ঐতিহাসিকরা ঘটনার কার্যকারণ ব্যাখ্যা করেননি। কিন্তু আধুনিক ইতিহাস রচনাপদ্ধতিতে কার্যকারণ সম্পর্ক অনুসন্ধান আবশ্যিক। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র দৃশ্যমান বা সহজে বােঝা যায় এমন কারণ অনুসন্ধানই নয়, পাশাপাশি ঘটনার গভীরে লুকিয়ে থাকা কারণ খুঁজে বের করে তার সঠিক উপস্থাপনা দ্বারা ঐতিহাসিক তার লেখাকে সম্পূর্ণতা দেন।

[8] তথ্য সংরক্ষণ ইতিহাস রচনা: ঐতিহাসিককে তার ইতিহাস রচনা শুরু করার আগে প্রয়ােজনীয় তথ্যের সংরক্ষণ করতে হয়। উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ এবং সেগুলি সঠিকভাবে যাচাই করে নেবার পর ঐতিহাসিক যথাযথভাবে তথ্যগুলি সংগ্রহ করে প্রথমেই তার ব্যক্তিগত সংগ্রহে বা নােট বুকে লিখে রাখেন ইতিহাস লেখার সময় প্রয়ােজন অনুসারে এই তথ্যগুলি তিনি ব্যবহার করে থাকেন।

দুটি শিল্প জাদুঘরের নাম হল[1] কলকাতার ‘আশুতোষ মিউজিয়াম অফ ইন্ডিয়ান আর্ট’ [2] আমেরিকার ‘ফিলাডেলফিয়া মিউজিয়াম অফ আর্ট’।

মূল্যায়ন: পরিশেষে বলাা যায়, একথাও মনে রাখতে হবে যে, শুধু সুসংবদ্ধ লিখন পদ্ধতি ব্যবহার করলেই চলবে না, ইতিহাসের পাঠ কে সকল স্তরের মানুষের কাছে মনোগ্রাহী করেে তোলার জন্য ঐতিহাসিক অবশ্যই তাতে ‘আপন মনের মাধুরীী’ মিশিয়ে ইতিহাস রচনাা করবে। রচনা ভাষা যাতে মধুর ও সহজ সরল হয়, সে বিষয়েও ঐতিহাসিক এর নজর রাখা দরকার।

আরো পড়ুন

দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের সমস্ত অধ্যায় থেকে  বড়ো প্রশ্ন উত্তর পেতে ক্লিক করুন


সবার আগে সমস্ত পরীক্ষার গুরুত্বপূর্ণ নোটস এবং মকটেস্ট পেতে জয়েন করুন -

আরও গুরুত্বপূর্ণ

× close ad