নৌ–বিদ্রোহের কারণ ও তার তাৎপর্য আলোচনা কর।
সূচনা: ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের শেষ পর্বে 1945 খ্রিস্টাব্দে 18 ফেব্রুয়ারি যে বিদ্রোহে সংঘটিত হয়েছিল তা ইতিহাসে নৌবিদ্রোহ নামে পরিচিত।এই বিদ্রোহ সর্বপ্রথম শুরু হয় বোম্বাইয়ের “তলোয়ার” নামক জাহাজের। ড: সুমিত সরকার এই বিদ্রোহকে” One of the most truly heroic episodes in our freedom struggle” বলে অভিহিত করেছেন।
এই নৌবিদ্রোহের পেছনে যে সমস্ত কারণ গুলি ছিল তা হলো :-
ব্রিটিশদের বর্ণ বৈষম্য নীতি:- ব্রিটিশ সরকারের বর্ণ বৈষম্য নীতি এই নৌ বিদ্রোহের অন্যতম কারণ। এই নীতি অনুযায়ী নৌবাহিনীর উচ্চপদ একমাত্র শ্বেতাঙ্গ তথা ইংরেজদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। ভারতীয় নাবিকদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা অনেক বেশি থাকা সত্ত্বেও উচ্চপদ থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করা হতো।
ভারতীয় নাবিকদের প্রতি দুর্ব্যবহার:- তরুণ,অনভিজ্ঞ ইংরেজ অফিসাররা নিজেদের বর্ণগত শ্রেষ্ঠত্বের দম্ভে ভারতীয়দের নাবিকদের সাথে অশালীন আচরণ করতে যা ভারতীয় নাবিকদের ক্রমশ ইংরেজদের প্রতি আক্রোশের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
নিম্নমানের খাবার ও কম বেতন:- ইংরেজি নাবিকদের থেকে ভারতীয় নাবিকদের একদিকে যেমন কম বেতন দেওয়া হতো, অন্যদিকে তাদের অত্যন্ত নিম্নমানের খাদ্য ও পোশাক সরবরাহ করা হতো।
বৈষম্যমূলক আচরণ: ভারতীয় নাবিকদের পুরনো নিম্নমানের অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ করতে হতো বলে যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের বেশিরভাগের প্রাণ চলে যেত। তারা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েও তারা কোন সুফল পায়নি।
আজাদিন বাহিনীর প্রভাব: এই অবস্থায় আজাদিন বাহিনীর বন্দি সেনাদের দিল্লির লাল কেল্লার বিচার শুরু হলে নৌবাহিনী বিদ্রোহী হয়ে ওঠে এবং ভারতব্যাপি নৌ বিদ্রোহের আগুন জ্বলে ওঠে।
আরো পড়ুন
দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের সমস্ত অধ্যায় থেকে বড়ো প্রশ্ন উত্তর পেতে ক্লিক করুন
প্রত্যক্ষ কারণ: তৎকালীন বোম্বাই শহরে 18 ফেব্রুয়ারি রয়াল ইন্ডিয়ান নেভি প্রধান সিগন্যালম্যান এম এস খানের নেতৃত্বে বোম্বাইয়ের নৌ প্রশিক্ষণ জাহাজ তলোয়ারের 1500জন নাবিক ও অখাদ্য আহার্য গ্রহণে অস্বীকার করলে বিদ্রোহের সূচনা ঘটে। দু-একদিনের মধ্যেই সারা ভারতব্যাপী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।
নৌ–বিদ্রোহের তাৎপর্য:-
আলাপ–আলােচনার ওপর গুরুত্ব: নৌবিদ্রোহের গুরুত্ব উপলব্ধি করেই ব্রিটিশ এই প্রথম আলাপ-আলােচনার মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরে গুরুত্ব আরােপ করে।
ব্রিটিশ ভীতির অবসানে: নৌসেনাদের বিদ্রোহ সাধারণ মানুষের মনে ব্রিটিশ ভীতি দূর করেছিল। দেশীয় সেনা ও সাধারণ প্রজাদের মধ্যে ব্যবধান দূর হয়েছিল।
হিন্দু–মুসলিম ঐক্যসাধনে: হিন্দু মুসলিম নাবিক, এমনকি সাধারণ হিন্দু-মুসলিম প্রজারাও বিদ্রোহে সাম্প্রদায়িক ঐক্যের পরিচয় দিয়েছিল।
উপসংহার: নৌবিদ্রোহের জন্যই ব্রিটিশ প্রশাসন শীঘ্রই ক্যাবিনেট মিশন বা মন্ত্রী মিশনকে ভারতে পাঠাতে বাধ্য হয়েছিল।
আরো পড়ুন
দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের সমস্ত অধ্যায় থেকে বড়ো প্রশ্ন উত্তর পেতে ক্লিক করুন