ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অবদান ভূমিকা | ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও আজাদ হিন্দ ফৌজ।
ভূমিকা: ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে অন্যতম উজ্জ্বল নাম সুভাষচন্দ্র বসু। যাকে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের মহানায়ক ও বিপ্লবী আন্দোলনের জ্বলন্ত তরবারি বলা হয়। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম মূলত তিনটি ধারায় পরিচালিত হয়েছিল। তার মধ্যে অন্যতম হলো বিদেশি শক্তির সাহায্যে যুদ্ধের দ্বারা স্বাধীনতা অর্জন। এই ধারা অবলম্বন করে সুভাষচন্দ্র বসু স্বাধীনতা আন্দোলন চালিয়েছিলেন।
স্বাধীনতা সংগ্রামে সুভাষচন্দ্র বসুর অবদান:-
রাজনীতিতে যোগদান: সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় চতুর্থ হয়েও নেতাজির চাকরির মায়া ছেড়ে মাত্র ২৪ বছর বয়সে তিনি ভারতীয় রাজনীতিতে যোগদান। এইসময় ‘দেশবন্ধু’ চিত্তরঞ্জন দাশের ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি স্বরাজ্য দলের সদস্য হন।
জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি: একে একে ছাত্র, যুব, ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনে সফল হবে নেতৃত্ব দিয়ে সুভাষচন্দ্র ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের হরিপুরা অধিবেশনে সভাপতি নির্বাচিত হন। পরের বছর ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে ত্রিপুরি কংগ্রেসের অধিবেশনে তিনি পুনরায় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন।
৩. ফরওয়ার্ড ব্লক দল গঠন: জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি থাকাকালীন গান্ধীজির সঙ্গে সুভাষচন্দ্রের মতবিরোধ ঘটে। এই সময়ই সুভাষচন্দ্র কংগ্রেস ত্যাগ করে ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে (৩ মে) ফরওয়ার্ড ব্লক নামে নতুন দল গঠন করেন। এর পরিণতিতে সুভাষচন্দ্রকে কংগ্রেস থেকে বহিষ্কার করা হয়।
আরো পড়ুন
দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের সমস্ত অধ্যায় থেকে বড়ো প্রশ্ন উত্তর পেতে ক্লিক করুন
দেশত্যাগ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিকায় সুভাষচন্দ্র ব্রিটিশের শত্রু দেশগুলির সাহায্য নিয়ে দেশ স্বাধীন করার পরিকল্পনা নেন। এই লক্ষ্যে নিজগৃহে গৃহবন্দি থাকা অবস্থায় তিনি ভাইপো শিশির বসুর সহযোগিতায় দেশ ত্যাগ করেন (১৯৩৯ খ্রি: , ১৭ জানুয়ারি)।
জার্মানিতে সুভাষচন্দ্র: দেশত্যাগ করে সুভাষচন্দ্র কাবুল ও মস্কো হয়ে জার্মানির রাজধানী বার্লিনে পৌঁছান। সেখানে জার্মান সরকারের সহযোগিতায় তিনি জার্মানীর হাতে বন্দি ভারতীয় সেনাদের নিয়ে ‘ইন্ডিয়ান লিজিন’ নামক একটি সেনাদল গঠন করেন। এখানে সুভাষচন্দ্র বসু ‘নেতাজি’ উপাধিতে ভূষিত হন।
জাপানে সুভাষচন্দ্র: ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে ক্যাপ্টেন মোহন সিং ও বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর ডাকে সুভাষচন্দ্র জাপানের রাজধানী টোকিওতে হাজির হন। জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিদেকি তোজো তাকে সমস্ত রকম সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন।
আজাদ হিন্দ ফৌজের সর্বাধিনায়ক: জাপানের হাতে বন্দি ভারতীয় সৈনিকদের নিয়ে রাজবিহারী বসু ও ক্যাপ্টেন মোহন সিং একটি সেনা বাহিনী গঠন করেন। সুভাষচন্দ্র এই বাহিনীর নাম রাখেন আজাদ হিন্দ ফৌজ (১৯৪৩ খ্রি: , ২৫ আগস্ট)। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে, ২১ অক্টোবর তিনি সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ সরকার নামে একটি অস্থায়ী ভারত সরকার প্রতিষ্ঠা করেন।
দিল্লি চলো অভিযান: এরপর সুভাষ চন্দ্রের নেতৃত্বে শুরু হয় আজাদ হিন্দ ফৌজের ‘দিল্লি চলো’ অভিযান (১৯৪৪)। সুভাষচন্দ্র ভারতবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, “তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব”।
শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান পরাজিত হলে আজাদ হিন্দ ফৌজ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।
উপসংহার: আজাদ হিন্দ ফৌজের পরাজয় সত্বেও সুভাষচন্দ্র বসুর নীতি ও আদর্শের প্রভাব পরবর্তীকালে বিভিন্ন বিপ্লবী আন্দোলনে পড়েছিল। যার ফলস্বরূপ নৌ বিদ্রোহ (১৯৪৬ খ্রি:) ও অন্যান্য ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন তীব্রতর হয়। যা, পরাধীনতার শিকলে বন্দি ভারতবর্ষকে স্বাধীনতার পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল।
আরো পড়ুন
দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের সমস্ত অধ্যায় থেকে বড়ো প্রশ্ন উত্তর পেতে ক্লিক করুন