কোন পরিস্থিতিতে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করা হয়? এই মামলার শেষ পরিণতি কী হয়েছিল? অথবা, টীকা লেখ: মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা।

Published On:

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

কোন পরিস্থিতিতে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করা হয়? এই মামলার শেষ পরিণতি কী হয়েছিল? অথবা, টীকা লেখ: মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা

Ans:- মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা : ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে কমিউনিস্টদের প্রভাব বৃদ্ধি পেলে ব্রিটিশ সরকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এইরূপ পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে কঠোর দমননীতি গ্রহণ করেছিল। মিরাট ষড়যন্ত্র মামল৷ (১৯২৯) হল এরকমই এক দমননীতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

মামলার প্রেক্ষাপট :

) শ্রমিকমালিক বিরোধঃ  ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে ভারতে শিল্পায়ন শুরু হলে শ্রমিক শ্রেণির উদ্ভব হয়। বিংশ শতকের প্রথম দিকে মালিক শ্রেণির শোষণ ও অত্যাচারে শ্রমিক-মালিক সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে। শ্রমিক শ্রেণির অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে কমিউনিস্টর৷ ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন জোরদার করে তুলে ব্রিটিশ সরকার চিন্তায় পড়ে যায়।

) পূর্ণ স্বাধীনতার দাবিঃ ১৯২৮ সালে জাতীয় কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে প্রায় পঁচিশ হাজার শ্রমিক যোগ দেয়। এখানে তারা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি তোলে যা ব্রিটিশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাড়ায়।

.) হুইটলি কমিশন নিয়োগ:- ক্রমাগত শ্রমিক অসন্তোষের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ১৯২৯ সালে হুইটলি কমিশন নিয়োগ করে। কিন্তু শ্রমিক শ্রেণি এই কমিশন বর্জন করে।

আরো পড়ুন

দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের সমস্ত অধ্যায় থেকে  বড়ো প্রশ্ন উত্তর পেতে ক্লিক করুন

) শ্রমিক বিরোধী বিল:- লর্ড আরউইন তাঁর জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগ করে ‘শিল্পবিরোধ বিল’ (Trade Disputes Bill) ও ‘জননিরাপত্তা বিল’ ( Public State Bill) পাশ করে। এই আইনের বিরুদ্ধে কমিউনিস্টরা সোচ্চার হলে সরকার আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।

এই পরিস্থিতিতে কমিউনিস্ট পার্টির কার্যকলাপ ও তাদের নেতৃত্বে শ্রমিক আন্দোলনকে স্তব্ধ করার জন্য ব্রিটিশ সরকার ১৯২৯ সালে ৩৩ জন কমিউনিস্ট শ্রমিক নেতাকে গ্রেফতার করে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এই মামলাই ‘মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা’ নামে পরিচিত।

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার পরিণতি:

অভিযুক্ত : মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিলেন মুজাফফর আহমেদ, এস. এ. ডাঙ্গে, পি. সি. যযাশী, মিরাজকার, নলিনী গুপ্ত প্রমুখ ভারতীয় কমিউনিস্ট নেতা। অন্যদিকে, ফিলিপ স্ক্র্যাট ও বেঞ্জামিন ব্রাডলি নামে দুজন ব্রিটিশ কমিউনিস্ট নেতাকেও এই মামলায় অভিযুক্ত করা হয়।

মামলার রায় : দীর্ঘ সাড়ে চার বছর ধরে (১৯২৯-৩৩) বিচার প্রক্রিয়া চলার পর শেষ পর্যন্ত অধিকাংশ অভিযুক্ত দীর্ঘমেয়াদিকারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ ঘােষিত হয়।

প্রতিক্রিয়া : এই মামলা হ্যারল্ড ল্যাস্কি, আইনস্টাইন, এইচ. জি. ওয়েলস প্রমুখ মনীষীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। দেশ-বিদেশে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে সমালােচনার ঝড় ওঠে। পণ্ডিত নেহরু একে ‘জুডিসিয়াল স্ক্যানডেল’ বলে সমালােচনা করেন।

মন্তব্য: মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা ভারতীয় কমিউনিস্টদের সাময়িক দমিত করলেও তাদের অঙ্কুরে বিনাশ করতে পারেনি। কমিউনিস্টরা অচিরেই কংগ্রেস সমাজতন্ত্রীদলের মধ্যে থেকে শ্রমিক-কৃষকদের নিয়ে গণসংগ্রাম গড়ে তুলতে পূর্ণ উদ্যমে ঝাপিয়ে পড়েন

আরো পড়ুন

দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের সমস্ত অধ্যায় থেকে  বড়ো প্রশ্ন উত্তর পেতে ক্লিক করুন


সবার আগে সমস্ত পরীক্ষার গুরুত্বপূর্ণ নোটস এবং মকটেস্ট পেতে জয়েন করুন -

আরও গুরুত্বপূর্ণ

× close ad